পুরানো kilogram, নতুন kilogram!
- নাফিউর রহমান পিয়াল
- Nov 20, 2018
- 3 min read
স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান পড়া ছেলে-মেয়েরা যখন বিজ্ঞানকে "আলাদা আলাদা" করে "ফিজিক্স", "কেমিস্ট্রি", "বায়োলজি"- এভাবে পড়া শুরু করে, তখন ফিজিক্স পড়তে গিয়ে প্রথমেই যে ব্যাপারটা পায়, তা হলো "পরিমাপ"। এটা পড়তে গিয়ে তারা জানতে পারে যে, জগতে নাকি সাতটা মৌলিক রাশি আছে। বইয়ে সেই সাতটা মৌলিক রাশির নাম আর তাদের একক এর নাম লেখা আছে। শুধু তাই না, সেই একক গুলো "ঠিক কতটুকু", সেটা কীভাবে মাপা যায়- সেই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তগুলোও বইয়ে সুন্দর করে লেখা আছে। যেমন, "সময়" একটা মৌলিক রাশি আর এর আন্তর্জাতিক একক হলো "সেকেন্ড"। ১ সেকেন্ড "ঠিক কতটুকু"? এটার ব্যাপারে ১৯৬৭/৬৮ সালে নেওয়া আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত হলো-
"The second is the duration of 9192631770 periods of the radiation corresponding to the transition between the two hyperfine levels of the ground state of the Caesium-133 atom."
১৯৯৭ সালে এর সাথে আরেকটু যোগ করা হয়-
"The definition refers to a Caesium atom at rest at a temperature of 0K."
পুরো ব্যাপারটার সরল বাংলা করলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে,
০ কেলভিন (বা -২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় একটা সিজিয়াম-১৩৩ পরমাণু যদি চুপচাপ বসে থাকে (অর্থাৎ গতিশীল না থাকে), তখন সেটা ৯১৯২৬৩১৭৭০ বার কাঁপতে যে সময় নেয়, সেই সময়টাই হলো ১ সেকেন্ড!
(এখানে বলে রাখা ভালো, জগতের সবকিছুই সবসময় কাঁপছে; এমনকি আপনি-আমিও! তাই জগতের সবকিছুরই আছে একটা "কম্পাঙ্ক" বা "frequency"। এক সেকেন্ডে একটা জিনিস যতবার কাঁপে সেটাকেই বলে তার কম্পাঙ্ক বা frequency!)
একইভাবে সাতটা মৌলিক রাশির আরেকটা হলো "ভর"; যার আন্তর্জাতিক একক হল "kilogram (কিলোগ্রাম)" বা kg! “kg”- শব্দটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই পরিচিত- "১ কেজি চাল" বা "আধা কেজি আলু"! প্রশ্ন হচ্ছে, এই “১ কেজি” মানে ঠিক কতটুকু?
এটা নিয়েও আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত আছে। অনেককাল আগে নেওয়া সিদ্ধান্তটা অনেকটা এরকম-
"The kilogram is the unit of mass; it is equal to the mass of the INTERNATIONAL PROTOTYPE of the kilogram."
অর্থাৎ, “আন্তর্জাতিক প্রোটোটাইপ” এর ভর ঠিক যতটুকু, ততোটুকু ভরই হল ১ কেজি! ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করা দরকার। মাপামাপির এককগুলো ঠিক করার জন্য ফ্রান্সের স্যাভ্রেতে একটা অফিস আছে। সেই অফিসে ৩.৯ সেন্টিমিটার লম্বা আর ৩.৯ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটা সিলিন্ডার আছে, যেটা প্লাটিনাম আর ইরিডিয়াম মিশানো একটা সংকর ধাতুর সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডারটাকেই বলা হচ্ছে "International Prototype" বা "আন্তর্জাতিক নমুনা"। এটার ভর ঠিক যতটুকু, ততোটুকুকেই বলা হচ্ছে ১ কেজি!
কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এসে একটা সমস্যা দেখা গেলো, সেটা হলো এই "International Prototype" টায় একটু একটু করে ক্ষয় হচ্ছে! কী সর্বনাশ! তাহলে তো এর ভর কমে যাবে! কিন্তু সবাই যদি সবসময় এটার ভরকেই ১ কেজি হিসেবে চিন্তা করে, তাহলে দেখা যাবে আজ থেকে অনেক অনেক দিন পর যখন এর ভর অনেক খানি কমে যাবে, তখনও সবাই ঐ "কম ভর" টাকেই বলবে ১ কেজি! ১৯৭০ সালের ১ কেজি আর ২০৭০ সালের ১ কেজি সমান না, আলাদা- ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত না!
এজন্যই এই ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ তে বিজ্ঞানীরা নতুনভাবে "১ কেজি"- কে "সংজ্ঞায়িত" করার কথা ভাবলেন। তারা ভাবলেন, এটার মাপকে এমনভাবে ঠিক করা দরকার, যাতে ২০১৮ সালে ১ কেজি যতটুকু হবে, ২৯১৮ সালে মাপলেও যেন ঠিক ততোটুকুই হয়!
এজন্যই তারা নতুন সংজ্ঞা ঠিক করেছেন “১ কেজি” বা “1 kilogram” এর জন্য। সেটা অনেকটা এমন-

ব্যাপারটা যদি কারও মাথার উপর দিয়ে গিয়ে থাকে বা কারও কাছে যদি এই-

সংখ্যাটাকে কোনো "ঐশ্বরিক" সংখ্যা মনে হয়, তাহলে তাদের বলি, ব্যাপারটা আসলে খুবই সোজা!
আজ থেকে অনেক কাল আগেই বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী জনাব আইনস্টাইন একটা কথা বলে গিয়েছিলেন, সেটা হলো- ভরকে শক্তিতে বা শক্তিকে ভরে রূপান্তরিত করা সম্ভব (কীভাবে সম্ভব সেটা Modern Physics এর অত্যন্ত মজার একটা আলোচনা! সেটা নিয়ে এখানে বিস্তারিত কিছু বলছি না)! কতটুকু ভর থেকে কতটুকু শক্তি পাওয়া যাবে বা কতটুকু শক্তি থেকে কতটুকু ভর পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে তিনি একটা হিসাবও দিয়েছেন এমন-

যেখানে,

আবার, একটু আগেই বলেছি, জগতের সবকিছুই কাঁপছে! তাই সবকিছুরই একটা কম্পাঙ্ক বা frequency আছে। কোনো কিছুর এই কম্পাঙ্কের মান জানা থাকলেও সেখান থেকে কত শক্তি পাওয়া যাবে সেটার মান বের করা যায়! হিসাবটা এমন-

যেখানে,

ব্যাস! কাজ হয়ে গেছে! এখন আমাদের কাছে আছে শক্তির দুইটা equation! একটা হলো,

আর আরেকটা হলো,

কাজেই আমরা লিখতে পারি-

c^2 আর h যেহেতু ধ্রুবক, কাজেই আমরা যদি কোনো কিছুর ভর জানি, তাহলেই আমরা তার কম্পাঙ্ক বলে দিতে পারি!
মজা তো! আচ্ছা, তাহলে ১ কেজির একটা বাটখারার কম্পাঙ্ক কত হবে?

আমরা জানি, আলোর দ্রুতি c এর মান ৩ X ১০^৮ মিটার/সেকেন্ড বা সেকেন্ডে প্রায় ৩০০০০০০০০ মিটার! কিন্তু এটা "exact" মান না। “Exact” মানটা হলো ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার/সেকেন্ড। আর প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক h এর মান হলো ৬.৬২৬০৬৮৭৬ X ১০^-৩৪ জুল-সেকেন্ড।
কাজেই ১ কেজি ভরের কোনো বস্তুর কম্পাঙ্ক হওয়ার কথা,

এটাকে ইচ্ছা করলে দশমিক এদিক ওদিক করে নানা ভাবে লেখা যায়; যেমন-

ইত্যাদি!
তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, ১ কেজি ভরের কোনো কিছুর frequency কত?
কেন! মাত্রই না বের করলাম?


আচ্ছা, এবার তাহলে "১ কেজি" বা “1 kilogram” এর নতুন সংজ্ঞাটা আরেকবার দেখা যাক। কী লেখা ছিলো সেখানে?


(চুপচাপ বসে থাকা (at rest) বলা হয়েছে এর কারণ হলো, গতিশীল হলে কোনো বস্তুর ভর বেড়ে যায় (জনাব আইনস্টাইন সেটা দেখিয়ে গেছেন)। কোনো একটা বস্তুর ভর একেক গতিতে একেক রকম হয়। তাই এখানে বস্তুর গতিকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে (গতিশূন্য)!)
খুব সহজ না?
Commentaires