top of page

স্থির তড়িতের যত কথা!

স্থির তড়িৎ কী???

আমি যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করি, বলতো, স্থির তড়িৎ কী? তুমি হয়তো একটা উত্তর দেবে। তোমার বন্ধু হয়তো আরেকটা উত্তর দেবে। কেউ হয়তো ঝট করে বইটা খুলে চট করে বইয়ের সংজ্ঞাটা ‘মুখস্ত’ করে নেবে এবং তারপর সেটাই শুনিয়ে দেবে, "স্থির তড়িৎ হলো ........."


আমি তোমাদের জায়গায় থাকলে কী করতাম জানো? নাম থেকেই একটা আইডিয়া করে বলে ফেলার চেষ্টা করতাম। সেটা কেমন? ধরো তোমাকে আমি একটা বই দিলাম, যার নাম ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’। এখন এই বইটা পড়ার আগেই কিন্তু তুমি মনে মনে কিছু কল্পনা করা শুরু করেছো যে, একটা হয়তো লোক আছে যার নাম ফেলু বা ফেলুদা। আর এই বইয়ে হয়তো তার কিছু বুদ্ধিদীপ্ত রহস্যের সমাধান পাওয়া যাবে। ব্যাস! এইটুকু ‘আইডিয়া’ করে তুমি বইটা পড়া শুরু করলে এবং তারপর হয়তো দেখলে যে, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই ভেবেছিলে! (ভুল হলেও কোন সমস্যা নেই!)


একটা সত্যি কথা তোমাদের বলি? বিজ্ঞান বুঝতে হলে বা শিখতে হলে তোমাকে অনেক বেশি কল্পনা বিলাসী হতে হবে। সেই কল্পনা যে সবসময় বাস্তবই হতে হবে বা একদম ঠিকই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তুমি কল্পনা করে যাও! ভুল হলে হোক! আমরা নন্দলাল না!



"নন্দ বাড়ির হতো না বাহির!

কোথা কি ঘটে কি জানি?

চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন

উল্টায় গাড়িখানি!

নৌকা ফিসন ডুবিছে ভীষণ!

রেলে কলিশন হয়!

হাঁটিলে সর্প, কুক্কুর আর-

গাড়ি চাপা পড়া ভয়!

তাই শুয়ে অতি কষ্টে বাঁচিয়া

রহিল নন্দনাল!

সকলে বলিল, “ভ্যালা রে নন্দ!

বেঁচে থাক চিরকাল!"


কাজেই বুঝতে পারছো, “যদি ভুল হয়!!” ভেবে সামনে না আগানোটা নিশ্চয়ই কোনো কাজে কথা না? তুমি কল্পনা করে যাও! বিশ্বাস করো! একদিন দেখবে তুমি অনেক ভালো বিজ্ঞান বুঝতে পারছো! বিজ্ঞানকে ভালোবেসে ফেলেছো! 😊 আরেকটা কথা! বাস্তব এবং কল্পনার মধ্যে একটা দারুন পার্থক্য আছে। সেটা হলো, বাস্তবের যে কোনো কিছুরই ‘Limitation’ আছে। কিন্তু কল্পনার রাজ্যটা বড়ই সুন্দর! বাধাহীন! অসীম!


তো যে কথা বলছিলাম, নাম থেকে কিছু একটা আইডিয়া করে ফেলা! ‘স্থির তড়িৎ’- আমি হলে কেমন আইডিয়া করতাম? আমি হয়তো এভাবে ভাবতাম, আচ্ছা, স্থির তড়িৎ, তাইতো? স্থির মানে কী? স্থির মানে কোথাও আটকে আছে, আগাচ্ছেও না, পেছাচ্ছেও না। আচ্ছা, আর তড়িৎ মানে কী? তড়িৎ মানে ... উম ..... তড়িৎ মানে ....... কারেন্ট! তার মানে যে কারেন্ট আটকে আছে!



প্রথমেই একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দেওয়া দরকার, সেটা হলো, তড়িৎ কী? এক কথায় যদি বলি, তড়িৎ হলো চার্জ! চার্জ তো দুইটা আছে, ধনাত্মক আর ঋণাত্মক। তড়িৎ মানে তাহলে কোন চার্জ? উত্তর হলো, তড়িৎ মানে দুইটা চার্জই! অর্থাৎ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যে কোন চার্জই তড়িৎ। তাহলে স্থির তড়িৎ কী? যেখানে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জ স্থির আছে বা আটকে আছে, অর্থাৎ সামনে বা পেছনে চলছে না! আর যদি চলে তখন কী হবে? বাহ! এটা কোনো ব্যাপার! চার্জ স্থির থাকলে স্থির তড়িৎ, তার মানে চার্জ চললে চল তড়িৎ!


এখন আমরা আমাদের খুব চেনাজানা আর খুব কেমন একটা উদাহরণ নিয়ে একটু কথা বলবো, সেটা হলো চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো! তোমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বই পড়ে জেনেছো, আবার অনেকে হয়তো এমনিতেই খেয়াল করেছো যে, চুল অঁচড়ানোর পর সেই চিরুনিটাকে নিয়ে কাগজের ছোট ছোট টুকরার উপর ধরলে কাগজের টুকরাগুলো লাফিয়ে উঠে চিরুনিতে লেগে যায় বা লাগাতে চায়! এটা কেন হয়?


“স্থির তড়িতের জন্য হয়!” তাই! কীভাবে জানলে?



হুম! খুব ভালো কথা কিন্তু কথা হলো, কখনও কি নিজে চিন্তা করেছো, একটু feel করে দেখেছো যে এটা কীভাবে স্থির তড়িতের ঘটনা হয়? বইয়ে লেখা আছে, ‘শীতকালে’ এই Experiment করতে। কেন? শীতকালে কেন? বর্ষাকালে করলে সমস্যা কী? ভেবেছো কী কখনও একটু?


আচ্ছা, আমরা আবার একটু আইডিয়া করার চেষ্টা করি। আমরা সবাই জানি যে, কোন পদার্থ হলো অসংখ্য অণু পরমাণুর সমষ্টি। পরমাণুগুলো ইলেকট্রন (e), প্রোটন (p) আর নিউট্রন (n) দিয়ে গঠিত, যেখানে একটা কেন্দ্রে p আর n থাকে, যেটাকে আমরা বলি নিউক্লিয়াস। আর নিউক্লিয়াসের বাইরের নিউক্লিয়াসকে ঘিরে থাকে e। একেক ধরনের পরমাণুতে এই e, p আর n এর সংখ্যা বিভিন্ন। এখন যেহেতু কেন্দ্রে p অর্থাৎ (+ve) চার্জ আর বাইরে e অর্থাৎ (-ve) চার্জ আছে, এবং আমরা জানি বিপরীত চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে, তার মানে অবশ্যই কেন্দ্রের p বাইরের e কে আকর্ষণ করে। হ্যাঁ করে। তবে বাইরের সব e এর প্রতি এই আকর্ষণ বা টান কিন্তু সমান না। অনেকগুলো e এর মধ্যে যে e টা কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি দিয়ে ঘুরঘুর করছে, আর যে e টা কেন্দ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে ঘুরছে, এই দুইটা e এর প্রতি কেন্দ্রের টান নিশ্চয়ই সমান হবে না! কাছের e টিকে কেন্দ্র বেশি জোরে টানবে, দূরেরটিকে কম জোরে টানবে। It’s common sense man!


হ্যাঁ, সবই ঠিক আছে, কিন্তু এর থেকে আমরা অলরেডি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি সেটা কেউ খেয়াল করেছে কি? সিদ্ধান্তটা হলো পরমাণুর সব e কে কেন্দ্র একই বলে টানে না। কাউকে জোরে টানে, কাউকে আস্তে টানে। তার মানে যাকে জোরে টানা হচ্ছে, সে হয়তো ঐ পরমাণুতেই আটকে থাকছে, বের হয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু যে e টিকে কেন্দ্র দূর্বলভাবে টানছে সেই e টা? সেটা কিন্তু দূর্বল টান ছিঁড়ে পরমাণু থেকে বেরিয়ে যেতেই পারে!


ব্যাস! আমাদের চিরুনির উত্তর হয়ে গেছে! তুমি হয়তো মাথা চুলকে ভাবছো, সেটা কীভাবে??! একটু চিন্তা করে দেখো, যে কোন বস্তুই অসংখ্য অণু পরমাণুর বা অসংখ্য e, p, n এর সমষ্টি। তার মানে আমাদের চিরুনিটিও তাই! এর মধ্যে p আর n কেন্দ্রে খুবই খুবই দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে, এত দৃঢ়ভাবে যে তুমি চিন্তাও করতে পারছো না! আর e গুলো তুলনামূলক দূর্বলভাবে আটকে থাকে। এটা কেন হয় এর উত্তরও তোমরা পেতে পারো যদি তোমরা চারটা মৌলিক বল সম্পর্কে জানো। তোমরা যদি বল নিয়ে একটু পড়াশুনা করো তাহলেই তোমরা এই চারটি মৌলিক বল সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে!


তো যাই হোক, যেটা বলছিলাম। তো খুবই দৃঢ়ভাবে আটকে থাকার কারণে বস্তু থেকে সাধারণত p বা n নড়াচড়া করে না, যদি কেউ দৌঁড় ঝাঁপ করে সেটা হলো e। এখন চিন্তা করে দেখো, তুমি যদি কোন বস্তুকে ঘষো, তাহলে কী হয় বা হতে পারে?


যদি কিছু ঐ বস্তুতে আলতোভাবে লেগে থাকে, সেটা ঝরে যেতে পারে, তাইতো? আচ্ছা, যদি তাই হয়, আমরা জানি যে কোন পদার্থে e গুলোই তুলনামূলক আলতোভাবে লেগে থাকে এবং এই e গুলোর মধ্যে কিছু e আছে, যাদের প্রতি কেন্দ্রের আকর্ষণ একবোরেই কম, অর্থাৎ সেগুলো অভাগাদের অভাগা, দূর্বলদের দূর্বল! তার মানে কী? তার মানে হলো বস্তুকে ঘষলে এই আলতোভাবে লেগে থাকা e গুলো ঝরে পড়তে পারে!


আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু তাতে কী হলো? এতে কী হলো এটাও তোমরা সহজে বুঝতে পারো! তোমরা জানো যে (+) এর উল্টা (-), আর (-) এর উল্টা (+)। তার মানে কোথাও যদি (±) এক সাথে থাকে, একজন আরেকজনের ক্রিয়াকে নাকচ করে দেয় (যেহেতেু তারা পস্পরের উল্টা!)। অর্থাৎ সমান সংখ্যায় বা সমান পরিমাণে, অর্থাৎ balanced অবস্থায় (±) থাকলে তার লব্ধি শূন্য! আর imbalanced হলে যেটা বেশি থাকবে, তার পক্ষে একটা লব্ধি থাকবে। ব্যাপারটা নিচের চিত্রের মতো-



(i) নং চিত্রে দেখা যাচ্ছে ৪ টা (+) আর ৪ টা (-) আছে, যার লব্ধি ০! এর থেকে আমি যদি ১ টা (-) সরিয়ে নেই [চিত্র (ii)], তাহলে সেখানে imbalanced অবস্থায় সৃষ্টি হয় এবং (+) এর পরিমাণ বেশি থাকে, অর্থাৎ লব্ধি হয় (+ve)! একইভাবে যদি (iii) নং চিত্রটা দেখি, সেখানে ১ টি (+) সরিয়ে নেওয়ায় লব্ধি (-ve)! অর্থাৎ আমি যে বৈশিষ্ট্যটি সরিয়ে নিচ্ছি বা কমিয়ে দিচ্ছি, লব্ধি হচ্ছে তার উল্টটা!


এখন ঘর্ষণের ফলে যদি কোন বস্তু থেকে e অর্থাৎ (-ve) চার্জ ঝরে পড়ে যায়, তাহলে বস্তুটার লব্ধি কী হলো? (+ve) charged!!! অর্থাৎ অলরেডি সেটি ধনাত্মক চার্জে চার্জিত হয়ে গেছে! একইভাবে এই ঝরে পড়া e যদি কোনে বস্তুতে গিয়ে লেগে যায়, সেখানে কী হলো? (-ve) চার্জের পরিমাণ বেড়ে গেলো, তুলনামূলকভাবে (+ve) চার্জের পরিমাণ কমে গেলো, অর্থাৎ বস্তুটি (-ve) চার্জে চার্জিত হয়ে গেলো!


এভাবেই ঘর্ষণের ফলে বস্তু যে কোন চার্জে চার্জিত হতে পারে। আর আমরা বলি ঘর্ষণের ফলে বস্তুতে স্থির তড়িতের সৃষ্টি হয়েছে। চার্জের কিছু মজার বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলো এমন-



অর্থাৎ সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীত ধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে, এর সাথে আমরা আজ থেকে আরও জানবো, যে কোন চার্জ একটা চার্জ নিরপেক্ষ বস্তুকেও আকর্ষণ করে!


এখানে একটা কথা আমি একটু বলতে চাই, সেটা হলো আমরা মাঝে মধ্যেই অনেককে বলতে শুনি বা এমনকি অনেক বইয়েও লেখা দেখি, ‘চার্জহীন বস্তু’। এখন কথা হলো চার্জহীন বস্তু মানে কী দাঁড়ায়? যে বস্তুকে কোন চার্জ নাই! চার্জ কী? চার্জ হলো p বা e। অর্থাৎ চার্জহীন বস্তু হলো যে বস্তুতে কোন p বা e নাই! কিন্তু p বা e ছাড়া কোন বস্তু কি সম্ভব? না! সম্ভব না! তার মানে চার্জহীন বস্তু বলে কোন বস্তু নেই। তাহলে এটা কী হবে? এটা হবে চার্জ নিরপেক্ষ। যেমন (i) নং চিত্রে যেটা দেখানো হয়েছে, ওটা কি চার্জহীন? না! কারণ সেখানে চার্জ আছে, ৪ টা (+ve) চার্জ আর ৪ টা (-ve) চার্জ। অর্থাৎ আমরা সেটাকে চার্জহীন বলতে পারবো না। কিন্তু হ্যাঁ, সেখানে সমান সমান বিপরীতধর্মী চার্জ আছে, তাই তার কোনো লব্ধি নেই, অর্থাৎ সেটি নিরপেক্ষ। আমরা এটিকে বলবো চার্জ নিরপেক্ষ, চার্জহীন না!


যাই হোক, আবার আগের কথায় ফিরে আসি। আমরা একটু আগেই জানলাম যে, যে কোন চার্জ একটা চার্জ নিরপেক্ষ বস্তুকেও আকর্ষণ করে। এবার চিরুনির উত্তরটা তোমার নিজেরই feel করতে পারার কথা। মাথা আঁচড়ানোর সময় চুলের সাথে তুমি চিরুনিটাকে ঘষেছো, তার মানে তোমার চিরুনিটা অলরেডি চার্জিত বস্তু হয়ে গেছে! এটিকে যখনই তুমি চার্জ নিরপেক্ষ কাগজের টুকরার কাছে নিচ্ছ, এটা সেটাকে আকর্ষণ করছে এবং এটাই স্বাভাবিক।


আরেকটা কথা বলে এই চিরুনির ব্যাপারটা শেষ করবো। সেটা হলো ‘শীতকাল’ প্রসঙ্গ। বইয়ে লেখা থাকে Experiment টা শীতকালে করতে। কেন? বর্ষাকালে করলে সমস্যা কী?


তোমরা হয়তো বিজ্ঞানী কুলম্বের নাম শুনেছো এবং কুলম্বের সূত্রটাও জানো। তিনি বলেছিলেন, যদি দুইটা বিন্দু চার্জ হয় q1 এবং q2 আর এরা যদি পরস্পর থেকে d পরিমাণ দূরে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যকার আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান হবে-



বইয়ের ভাষায় যদি বলি, বইগুলোতে এটাকে বলে মাধ্যমের তড়িৎ বা চৌম্বক প্রবেশ্যতা। কী?! মাথার উপর দিয়ে গেলো? চিন্তা নেই! আমারও মাথার উপর দিয়ে গেছে। তার চেয়ে চলো আমরা আমাদের মতো করে সহজভাবে জিনিসটাকে বোঝার চেষ্টা করি।


আচ্ছা, তোমার কী মনে হয়? দুইটা +1 C এর চার্জকে তুমি যদি মহাশূন্যে নিয়ে গিয়ে পরস্পর থেকে 1 m দূরে রাখো, আর দুইটা +1 C এর চার্জকে তুমি যদি পানিতে নিয়ে গিয়ে পরস্পর থেকে 1 m দূরে রাখো; দুই ক্ষেত্রেই কি তাদের বিকর্ষণ বলের মান একই হবে? আমি জানি, তুমি বলছো যে না, একই হবে না। তাহলে কোথায় বেশি আর কোথায় কম হবে? আমি জানি, এটার উত্তরও তুমি ঠিক দিয়েছো। মহাশূন্যে বেশি হবে, পানিতে কম হবে। এখন কথা হলো, এটা কেন হলো? ভয় পেয়ো না, যা ভেবেছো, সাহস করে তাই উত্তর দাও। তুমি ভেবেছো যে মহাশূন্যে চার্জ দুইটার মাঝে বাধা কম, আর পানিতে তাদের মধ্যে বাধা বেশি, তাই। তুমি কি জানো? তুমি সঠিক উত্তরটাই দিয়েছো!


তার মানে একাধিক চার্জের মধ্যে যে বলটা কাজ করে বা করবে, সেটা চার্জগুলোর মধ্যবর্তী মাধ্যম বা বাধার উপর নির্ভর করে। বাধা বেশি হলে কম বল কাজ করবে, বাধা কম হলে বেশি বল কাজ করবে।


তাহলে চলো আমরা সেই ε (epsilon) কে এবার চিনি। আমি ε এর নাম দিলাম বাধা। অর্থাৎ চার্জগুলোর মধ্যবর্তী জায়গায় যে মাধ্যমটা আছে, সেই মাধ্যম কতটা বাধা দিচ্ছে সেটাই প্রকাশ করবে আমাদের এই প্রতীকটা। ε এর মান বেশি হলে বাধা বেশি, ফলে বল কমে যাবে। আর ε এর মান কম হলে বাধা কম, ফলে বল বেশি হবে।


এবার তোমার নিজেরই বুঝে যাওয়া উচিত কেন শীতকালের কথা বলা হয়েছে, আর বর্ষাকালে সমস্যাটাই বা কী? শীতকালে বাতাস থাকে শুষ্ক, আর বর্ষাকালে বাতাস থাকে ভেজা, অর্থাৎ পানিযুক্ত বাতাস। এখন তুমিই বলো, কে বাধা বেশি দেবে? অবশ্যই ভেজা বাতাস! অর্থাৎ বর্ষাকালে বাতাস মাধ্যমের ε এর মান বেশি হয়, ফলে F (বল) এর মান কম হয় আর শীতকালে শুষ্ক বাতাসের ক্ষেত্রে ε এর মান কম হয়, ফলে F এর মান বেশি হয়। অর্থাৎ শীতকালে আমি চার্জিত বস্তু দ্বারা বেশি বল পাবো, ফলে Experiment টার Result টা খুব সহজেই চোখে ধরা পড়বে। কিন্তু বর্ষাকালে চার্জিত বস্তু দ্বারা অনেক কম বল পাবো, ফলে কাগজের টুকরা আর সেভাবে লাফিয়ে চিরুনিতে লাগবে না! তাই Experiment টা বর্ষাকালে না করে শীতকালেই করা ভালো। আর তাই বইয়েও ‘শীতকাল’, ‘শীতকাল’ করা হয়। 😊

যাই হোক, স্থির তড়িতের কিছু ইধংরপ কথা আর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর এখানেই সমাপ্তি! 😊


তড়িৎ আবেশ

“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ!”


এই কাথাটা নিশ্চয়ই সবাই শুনেছো। এর মানে কী বলতো? এটা তোমাকে আসলে কী message দেয়? এটা তোমাকে বলতে চায়, কোন কিছু তার আশেপাশের জিনিসের দ্বারা প্রভাবিত হয়। So, be careful!


হ্যাঁ, আমরা অলরেডি আবেশ নিয়ে আলোচনা করে ফেলেছি! তুমি হয়তো ভাবছো, কখন করলাম? উত্তর হলো, ঐ যে বললাম কোন কিছু তার আশেপাশের জিনিসের দ্বারা প্রভাবিত হয়- হ্যাঁ, এটাই তো আবেশ!!!


এটার ব্যাখ্যা আমি তোমাদের দিয়েই দেওয়াতে চাই, নতুন এবং পুরানো এর সমন্বয়ে!



এখনই টের পাবে!


পুরানো এবং নতুন এর সমন্বয়ের মানে হলো- আমি জানি তোমরা সবাই আগে থেকেই এটা জানো যে, সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে আর বিপরীতধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। অর্থাৎ এটা তোমাদের কাছে পুরানো কথা! আর আমি জানি, অনেকেই এটি জানতে না, আজ নতুন জানলে যে, যে কোনো চার্জে চার্জিত বস্তু একটা চার্জ নিরপেক্ষ বস্তুকেও আকর্ষণ করে। এটাই তোমাদের অনেকের কাছেই নতুন কথা। এখন আমরা যে কাজটা করবো তাহলো- এই পুরানো আর এই নতুন কথা দুইটাকে মিলিয়েই আবেশের ব্যাখ্যাটা তৈরি করে ফেলবো!



ধরো, তোমাদের কাছে একটা বস্তু A আছে, যেটা Positive [চিত্র (iv)] বা Negative [চিত্র (vi)] যেকোন একটা চার্জে চার্জিত। এখন তুমি এটাকে অন্য যেকোন একটা বস্তু B এর কাছে নিলে, আর দেখলে যে A বস্তুটা B বস্তুটাকে আকর্ষণ করছে। এখন বলতো, B বস্তুটার চার্জ কী?


আমি জানি, এখন তুমি চট করেই এর উত্তর দিতে পারবে না। এর কারণ হলো, তুমি ভাবছো B বস্তুটা যদি A বস্তুর বিপরীত চার্জে চার্জিত হয়, তাহলেও A বস্তুটা B বস্তুটাকে আকর্ষণ করবে। আবার B বস্তুটা যদি চার্জ নিরপেক্ষ হয়, তাহলেও A বস্তুটা B বস্তুটাকে আকর্ষণ করবে। তাহলে???


চলো, আমরা একটা কাজ করি। আমরা ধরে নেই B বস্তুটা চার্জ নিরপেক্ষ। অর্থাৎ চার্জিত A বস্তুটি চার্জ নিরপেক্ষ B বস্তুকে আকর্ষণ করছে। এখন আমাদেরকে এর একটা যুক্তি খুঁজে বের করতে হবে।


আমরা আমাদের পুরানো কথা থেকে জানি যে, বিপরীত ধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। অর্থাৎ কোথাও যদি একটা চার্জিত বস্তু থাকে আর সেটা দ্বারা অন্য বস্তুকে আকর্ষণের ব্যাপার থাকে, তাহলে অন্য বস্তুতে অবশ্যই প্রথম বস্তুর বিপরীতধর্মী চার্জ থাকার কথা! এখন যেহেতু চার্জিত A বস্তুটি B বস্তুটিকে আকর্ষণ করছে, তাহলে আমাদের সেই পুরানো জানা কথাটা আমাদের বলছে, অবশ্যই B বস্তুটিতে A এর বিপরীত চার্জ থাকার কথা এবং এই বিপরীতধর্মী চার্জের কারণেই তাদের মধ্যে আকর্ষণ ঘটছে! এখন চিত্র (iv), (v), (vi) আর (vii) এর দিকে তাকাও। A বস্তুটি যদি হয় (+ve) চার্জে চার্জিত, তাহলে B এর (-ve) চার্জের জন্যই A এর B কে আকর্ষণ করার কথা! কিন্তু আমরা আগেই ধরে নিয়েছিলাম যে আমাদের B বস্তুটা চার্জ নিরপেক্ষ। চার্জ নিরপেক্ষ B, আবার B এর (-ve) চার্জের জন্যই A এর B কে আকর্ষণ করছে- এটা কীভাবে সম্ভব? সম্ভব!


চার্জ নিরপেক্ষ মানে কী? বস্তুতে যে কয়টা (+ve) চার্জ আছে, ঠিক সেই কয়টাই (-ve) চার্জও আছে- তাইতো? তার মানে B তে যে কয়টা (-ve) চার্জ আছে, সেই কয়টা (+ve) চার্জও আছে। এখন, B এর (-ve) চার্জের জন্যই যদি A বস্তুটা B কে আকর্ষণ করে থাকে, তাহলে B এর (-ve) চার্জগুলো নিশ্চয়ই A এর (+ve) চার্জের দিকে হেলে থাকবে! আর B এর বাকি (+ve) চার্জগুলো বস্তুর মধ্যেই অপর পাশে অবস্থান নেবে। এতে কী হলো দেখতো! B এর চার্জগুলো এমনভাবে অবস্থান নিলো, যেন মনে হচ্ছে, A এর (+ve) চার্জ B এর (-ve) চার্জকে আকর্ষণ করছে (বিপরীতধর্মী--আকর্ষণ--পুরানো কথা), A এর (+ve) চার্জ B এর (+ve) চার্জকে বিকর্ষণ করছে (সমধর্মী--বিকর্ষণ--পুরানো কথা) এবং সব মিলিয়ে B বস্তুটি চার্জ নিরপেক্ষও থাকছে! আর সবশেষে এখন একটু অন্যভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, (+ve) চার্জে চার্জিত A বস্তুকে চার্জ নিরপেক্ষ B বস্তুর কাছাকাছি আনার সাথে সাথেই A এর দিকে B এর (-ve) চার্জগুলো সরে আসছে এবং B এর (+ve) চার্জগুলো A এর উল্টাদিকে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ A থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। তার মানে মনে হচ্ছে যে, একটা চার্জিত বস্তু আর একটা চার্জ নিরপেক্ষ বস্তু কাছাকাছি আনলে চার্জিত বস্তুর প্রভাবে চার্জ নিরপেক্ষ বস্তুর চার্জগুলো সমান দুইভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে এবং দুই বিপরীতধর্মী চার্জ আলাদা হয়ে যাওয়ার পর প্রভাবক চার্জের বিপরীতধর্মী চার্জগুলো প্রভাবক চার্জের কাছে চলে আসছে এবং সমধর্মী চার্জগুলো প্রভাবক চার্জ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ একটা চার্জিত বস্তু একটা চার্জ নিরপেক্ষ বস্তুকে আকর্ষণ করছে (নতুন তত্ত্ব প্রমাণিত) এবং এটা হচ্ছে আবেশের জন্যই!


A বস্তুটা যদি (-ve) চার্জে চার্জিত হতো তাহলে কী হতো সেটিও চিত্রে দেখানো হয়েছে।


আবেশের ব্যাপারটা বুঝতে পারলে স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের ব্যাপারটাও তোমরা সহজেই বুঝতে পারবে!


তড়িৎ ক্ষেত্র

ছোটবেলায় চুম্বক নিয়ে খেলা করেনি বা নাড়াচাড়া করেনি আমার ধারণা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। কাজেই আমি ধরে নিচ্ছি তোমরা ছোটবেলায় চুম্বক নিয়ে খেলেছো! তখন নিশ্চয়ই এটা খেয়াল করেছো যে, তুমি যদি দুইটা চুম্বক নিয়ে খেলো, তাহলে কখনও কখনও একটা চুম্বকের কাছে আরেকটা চুম্বক আনলে তারা লেগে যেতো, আবার কখনও কখনও দূরে সরে যেতো। আকর্ষণ বা বিকর্ষণ যাই হোক না কেন, এটা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো যে চুম্বক দুইটা অনেক দূরে থাকলে তাদের মধ্যে এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণ তুমি দেখতে পেতে না। কাছে আনতে আনতে একটা পর্যায়ে এসে তুমি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলটা দেখতে পেতে। ধরো, এই জায়গাটার নাম দিলাম আমরা M। M থেকে চুম্বকের দিকে যেকোন জায়গায় এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণ দেখতে পাওয়া যায়; কিন্তু M থেকে বাইরের দিকে, অর্থাৎ চুম্বকের বিপরীত দিকে গেলে কোন আকর্ষণ বা বিকর্ষণ দেখা যায় না। অর্থাৎ একটা চুম্বক এর কাছাকাছি জায়গায় এর প্রভাব দেখা যায় এবং একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পার হয়ে গেলে তার প্রভাব আর চোখে পড়ে না। এই যতটুকু Area এর মধ্যে চুম্বকটার প্রভাব বজায় থাকে, সেটাকেই বলা যায় ঐ চুম্বকের জন্য চৌম্বকক্ষেত্র!


একইভাবে একই ধরনের কথাগুলো চার্জের জন্যও প্রযোজ্য। দুইটা চার্জ অনেক দূরে দূরে থাকলে তাদের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ আমরা দেখতে পাই না। কোন একটা চার্জ থেকে একটা নির্দিষ্ট Area পর্যন্ত তার প্রভাব বজায় থাকে এবং সেটাকে বলা যায় ঐ চার্জের জন্য তড়িৎক্ষেত্র।


তাত্ত্বিভাবে তড়িৎক্ষেত্র অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পার হওয়ার পর এর প্রভাব আর পাওয়া যায় না বললেই চলে!


কোন একটা চার্জের তড়িৎক্ষেত্র কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বা সেখানে তার প্রভাব কেমন এটা আমরা কীভাবে বুঝবে? খুব সহজ! যে বিন্দুতে বা যে জায়গায় আমি কোন একটা চার্জ দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের মান বা চার্জটার প্রভাব বুঝতে চাই, সেখানে অন্য একটা চার্জ এনে রাখবো! এই পরের চার্জটার নাম দিলাম আমরা পরখ চার্জ (যেহেতেু এটা দিয়েই আমরা পরখ করে দেখছি অন্য একটা চার্জের প্রভাব কেমন)। এখন এই পরখ চার্জটা ঐ আগের চার্জটার জন্য কোনোভাবে প্রভাবিত হচ্ছে কি না (অর্থাৎ কোনো বল অনুভব করছে কি না), হলে কোন দিকে কতখানি বল অনুভব করছে- এটা দিয়েই আমরা ঐ বিন্দুতে আগের চার্জটার তড়িৎক্ষেত্র বুঝে ফেলতে পারি এবং মানও বের করে ফেলতে পারি! অর্থাৎ কোন একটি চার্জ দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে একটি পরখ চার্জ যে বল অনুভব করে সেটাই ঐ বিন্দুতে প্রথম চার্জটার দরুণ সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র!


আন্তর্জাতিকভাবে এই পরখ চার্জটাকে +1 C চার্জ অর্থাৎ একক ধনাত্মক চার্জ নেওয়া হয়। অর্থাৎ কোন একটা চার্জ Q দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে একটি +1 C চার্জ রাখলে সেটি যে বল অনুভব করে সেটাই ঐ বিন্দুতে Q চার্জের দরুণ সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র (E)।


অর্থাৎ-



বলরেখা

এই লেখাটার প্রায় শুরুর দিকে আমি কল্পনা বিলাসী হওয়ার একটা কথা বলেছিলাম, মনে আছে? এমনি এমনি সেটা বলিনি। বিজ্ঞানে কল্পনাশক্তি একটা অনেক বড় হাতিয়ার। এমনও হতে পারে, হয়তো একটা খুব কঠিন সমস্যা, স্বাভাবিকভাবে তার সমাধান হচ্ছে না। একটা দারুণ কল্পনা করে তার সাহায্যে খুব সহজেই সমস্যাটার সমাধান করা হয়ে গেলো কিংবা কোনো কঠিন জিনিসের একটা সহজ ব্যাখ্যা দেওয়া গেলো! এমনকি চিন্তা করাটাও এক ধরনের কল্পনা! 😊


আমি আবার হঠাৎ কল্পনা নিয়ে এত কথা বলা শুরু করলাম তার একটা কারণ আছে। সেটা হলো আমরা এখন বলরেখা নিয়ে একটু কথা বলবো, আর ‘বলরেখা’ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক! অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের কল্পনায় সৃষ্ট! এর মানে হলো তুমি বাস্তবে কখনও বলরেখা দেখবে না, তোমাকে বলরেখা কল্পনা করে নিতে হবে, কারণ বাস্তবে এটার কোনো অস্তিত্ব নেই! তাহলে এমন অবাস্তব একটা জিনিসের কী দরকার ছিলো? দরকার আছে! সেটা হলো বলরেখার ধারণা থেকে তড়িৎ ও চুম্বকের অনেক ঘটনার ব্যাখ্যা খুব সহজে দেওয়া যায় (এবং আমি তোমাদের এমন একটা ব্যাখ্যা দেখাবোও!)।


যেহেতু বলরেখা একটা কাল্পনিক ধারণা, তাহলে চলো প্রথমেই বলরেখার কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা কল্পনা করে নেই!


  • (+ve) চার্জের বেলায় বলরেখা চার্জ থেকে বের হবে এবং (-ve) চার্জের বেলায় বলরেখা চার্জে এসে ঢুকবে। একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে বলরেখার দিকই হচ্ছে ঐ বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্রের দিক।

  • চার্জের পরিমাণ যাত বেশি হবে, বল রেখার সংখ্যা ততো বেশি হবে।

  • বলরেখাগুলো যত কাছাকাছি থাকবে, তড়িৎক্ষেত্র ততো বেশি হবে।

  • বলরেখাগুলো কখনও পরস্পরকে ছেদ করে না।


আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম যে আমি বলরেখার সাহায্যে তোমাদেরকে কিছু একটা ব্যাখ্যা করে দেখাবো। চলো একটু আগে আলোচনা করা তড়িৎ ক্ষেত্রটাই তাহলে বলরেখা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক!


তার আগে চলো আমরা একটা সহজ ব্যাপার দেখে নেই। নিচের চিত্রটা লক্ষ্য করঃ



বলতো এখানে (angle)AOB = কত? ৩০ ডিগ্রী! আচ্ছা এবার বলতো (angle)COD = কত? এটাও ৩০ ডিগ্রী! তার মানে (angle)AOB = (angle)COD, তাইতো? আচ্ছা, তার মানে কি এই যে, AB = CD ? না, তা কিন্তু না, চিত্রের দিকে তাকাও। AB < CD. এটা কেন হলো বলতো? কারণ খুব সহজ! কোণ টার যেখানে উৎস, অর্থাৎ O বিন্দু, সেখান থেকে একটা নিদিষ্ট কোণ উৎপন্ন করে উৎপন্ন দুইটা রেখা উৎস থেকে যত দূরে সরে যাবে, তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব ততো বেড়ে যাবে অর্থাৎ তারা পরস্পর থেকে অনেক দূরে সরে যেতে থাকবে এবং তাদের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গার পরিমাণ বাড়তে থাকবে।


এবার চলো আমরা আরেকটা চিত্র দেখি!



এই চিত্রটায় তুমি একটা কাজ করো তো! চিত্রটার ABCD বক্সের মধ্যে যে কোন জায়গায় তুমি চোখ বন্ধ করে আন্দাজে ১০ বার তোমার কলমের নিবটা ফেলো। দেখো যে কয়বার এটা কোন না কোন দাগকে স্পর্শ করেছে আর কয়বার কোন দাগকেই স্পর্শ করেনি (অর্থাৎ পাশাপাশি দুইটা দাগের মাঝে কোথাও পড়েছে)। সংখ্যাগুলো লিখে রাখো। ঠিক একই ধরনের পরীক্ষা BEFC বক্স এবং EGHF বক্সের জন্যও করো। সংখ্যাগুলো লিখে রাখো।


এবার দেখোতো এই ছোট্ট খেলাটা থেকে তুমি কী পেলে? তুমি যতোই A থেকে দূরে সরে গেছো, তোমার কলমের নিবের কোন না কোন দাগকে স্পর্শ করার হার ততো কমে গেছে এবং কোনো দাগকেই স্পর্শ না করার হার ততো বেড়ে গেছে। এর মানে কি বুঝতে পারছো? আমরা যদি এটা এভাবে ধরে নেই যে, উৎসটা থেকে সৃষ্ট রেখার স্পর্শ পাওয়া মানেই হলো কলমের নিবের উপর উৎসটার প্রভাব আছে আর রেখার স্পর্শ না পাওয়ার মানে হলো ওটার উপর উৎসটার কোনো প্রভাব নেই, তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? আমরা উৎস থেকে যত দূরে সরে যাচ্ছি, কলমের নিবের উপর উৎসের প্রভাব ততো কমে যাচ্ছে! অনেক অনেক দূরে চলে গেলে হয়তো দেখা যাবে যে আমি যে ১০ বার চোখ বন্ধ করে আন্দাজে কলমের নিব ধরেছি, ১ বারও কোন দাগকে সে খুঁজে পায়নি! ১০ বারই ফাঁকা জায়গায় পড়েছে। যার অর্থ হলো সেটার উপর তখন উৎসের আর কোন প্রভাব নেই!


এবার এই খেলাটার শুরু যেখানে করেছিলাম (অর্থাৎ Last চিত্রের পর থেকে), যেখানে যেখানে ‘কলমের নিব’ কথাটা আছে, সেখানে সেখানে ‘কলমের নিব’ এর জায়াগায় ‘পরখ চার্জ’ কিংবা ‘+1 C চার্জ’ Replace করে এই পর্যন্ত লেখাটা আরেকবার পড়। আশা করি বলরেখার সাহায্যে তড়িৎক্ষেত্রের ব্যাখ্যা তুমি পেয়ে গেছো। 😊


তড়িৎ বিভব

তোমরা এই ‘বিভব’ কথাটিকে বিভিন্ন জায়গায় দেখেছো, যেমন- গতিশক্তি + বিভবশক্তি = ধ্রুবক, মহাকর্ষীয় বিভব, তড়িৎ বিভব ইত্যাদি। এখন কথা হলো, এই বিভবগুলোর মধ্যে কি কোন মিল আছে? বিভব আসলে কী? ব্যাপারটা কি আমরা আসলে বুঝি? নাকি শুধু মুখস্ত করে যাই?


তোমরা ব্যাপারটাকে কীভাবে চিন্তা করো জানি না, তবে আমি যেভাবে বুঝি, তোমাদেরকেও আমার মতো করে বুঝানোর চেষ্টা করবো। একটু চিন্তা করো, তোমরাও বুঝে যাবে।


আমার কাছে ‘বিভব’ জিনিসটা হলো স্বাভাবিকতার উল্টাটা, অর্থাৎ স্বাভাবিকতাকে বাধা দেওয়া বা অস্বাভাবিকটা করা বা হওয়া! কি? মাথার উপর দিয়ে গেলো? আগামাথা কিছুই বুঝলে না! আচ্ছা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা পরিষ্কার করছি।


আচ্ছা, বলতো গাছ থেকে আপেল কোন দিকে পড়ে? নিচের দিকে, তাইতো? তার মানে আপেল নিচের দিকে পড়বে এটাই হলো স্বাভাবিকতা বা স্বাভাবিক ঘটনা। এখন স্বাভাবিকতার উল্টটা তাহলে কী হবে? আপেলকে যদি নিচের উল্টা দিকে অর্থাৎ উপরের দিকে উঠানো হয়, তাইতো? হ্যাঁ ঠিক তাই। আর আমি বলেছি যে অস্বাভাবিক ঘটনা হওয়াই হলো বিভব সৃষ্টি হওয়া বা বিভব বাড়া, তার মানে আপেলটাকে উপরে উঠানো হলে আপেলের বিভব বাড়বে আর নিচের পড়তে দিলে (অর্থাৎ স্বাভাবিক ঘটনাটা ঘটতে দিলে) বিভব কমে যাবে!


ঠিক এভাবে তোমরা অনেক উদাহরণ খুঁজে বের করতে পারো। যেমন ধরো, মহাবিশ্বের যে কোন বস্তুকণা অন্য বস্তুকণাদেরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে, যাকে আমরা মহাকর্ষ বলে থাকি। এখন তাহলে যদি একটা গ্রহ আরেকটা গ্রহের দিকে মহাকর্ষ বলের টানে এগিয়ে যায়, এটাকে তুমি কী বলবে? দেখো, মহাকর্ষ বলের কারণে একজন আরেকজনকে নিজের কাছে টানবে- এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। তার মানে একটা গ্রহ আরেকটা গ্রহকে টেনে কাছে আনছে- মহাকর্ষের সাপেক্ষে এটাই হলো স্বাভাবিক ঘটনা, কি তাইতো? তাহলে এখানে গ্রহটার বিভবশক্তি কমে যাচ্ছে। যদি স্বাভাবিকের উল্টটা হতো? অর্থাৎ মহাকর্ষের টানে গ্রহটার কাছে আসার কথা। কিন্তু কোন কারণে দূরে সরে যাচ্ছে, তখন? হ্যাঁ, তখন গ্রহটার বিভব শক্তি বেড়ে যেত [এটাকেই বলে মহাকর্ষীয় বিভব]!


চলো এবার তাহলে তড়িৎ বিভব নিয়ে আলোচনাটা সেরে ফেলি। নাম থেকে আইডিয়া করা, ব্যাপারটা মনে আছে তো? চলো তো এখানেও কাজটা করে ফেলি! ‘তড়িৎ বিভব’ এই নামটাতে দুইটা জিনিস আছে, ‘তড়িৎ’ আর ‘বিভব’। বিভব কি সেটা নিয়ে তো কেবলই কিছু বললাম, আর তড়িৎ কী? সেটা নিয়েও বলা হয়েছে, একদম শুরুতে। তড়িৎ হলো চার্জ! অর্থাৎ আমরা যদি চার্জের ক্ষেত্রে বিভব ব্যাপারটা দেখাতে পারি, সেটাই হবে তড়িৎ বিভব!


নিচের চিত্রগুলো লক্ষ্য করঃ



আমরা জানি সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে, আর বিপরীতধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এগুলোই হলো স্বাভাবিক ঘটনা। যদি কোথাও আমরা এই স্বাভাবিক ঘটনাটা ঘটতে দেখি, আমরা বলবো সেখানে বিভব কমে যাচ্ছে! আর যদি দেখি স্বাভাবিকের উল্টটা ঘটছে, তখন বলবো বিভব বেড়ে যাচ্ছে!


এখন (x) নং চিত্রটা দেখো। সেখানে কী দেখা যাচ্ছে?


একটা (+ve) চার্জ আর একটা (-ve) চার্জ। স্বাভাবিকভাবে (-ve) চার্জটার (+ve) চার্জের দিকে তড়িচ্চুম্বকীয় আকর্ষণ বলের কারণে সরে আসার কথা। যদি তাই হয়, অর্থাৎ (-ve) চার্জটা যদি (+ve) চার্জের দিকে সরে আসে, তাহলে (-ve) চার্জটার বিভব শক্তি কমে যাবে। আর যদি কোন কারণে (-ve) চার্জটা (+ve) চার্জ থেকে দূরে সরে যায়। তাহলে (-ve) চার্জটার বিভব শক্তি বেড়ে যাবে [এটাই হলো তড়িৎ বিভব]।


(xi) এবং (xii) নং চিত্রের ক্ষেত্রে কী হলে বিভব বাড়বে আর কী হলে বিভব কমবে বলতে পারবে কি?


আরেকটা কথা বলে বিভবের আলোচনাটা শেষ করতে চাচ্ছি। সেটা হলো, তোমরা হয়তো ধনাত্মক আর ঋণাত্মক বিভবের নাম শুনে থাকবে। বলা হয় ধনাত্মক চার্জের দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যের বিভব হলো ধনাত্মক তড়িৎ বিভব আর ঋণাত্মক চার্জ দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রে যে বিভব হয়, সেটা হলো ঋণাত্মক তড়িৎ বিভব। এটা কেন? এটা কি একটা সংজ্ঞা? নাকি এটাও চিন্তা করে বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়?


এই উত্তরে জন্য আমরা আবার চলো আমাদের পরখ চার্জের কাছে ফিরে যাই। সেটা কি মনে আছে তো? ঐ যে +1 C চার্জ!


নিচের চিত্র দুইটি লক্ষ্য করঃ



প্রথমেই একটা ব্যাপার জানিয়ে রাখি, সেটা হলো অসীমে বিভব সবসময় শূন্য (সেজন্য তোমাদের বইতে বিভবের সংজ্ঞা দেওয়ার সময় অসীমের সাপেক্ষে দেওয়া হয়)! কেন অসীমে বিভব শূন্য? এর উত্তরও তোমরা নিজেরাই দিতে পারো। যদি তড়িৎ বিভবের কথাই চিন্তা করি, বলতো কোন একটা চার্জের দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র অসীমে যেন কেমন? শূন্য! (বলরেখা দিয়েও তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে)। তার মানে অসীমে একটা চার্জের প্রভাব নেই! তাই অসীমে বিভবও শূন্য হয়।


অসীমে যে বিভব শূন্য সেটা তোমরা গাণিতিক ভাবেও বুঝতে পারো। তড়িৎ ক্ষেত্রের জন্য সূত্রটা ছিলো-





আর তড়িৎ বিভবের জন্য সূত্র হলো-





অর্থাৎ আমরা যদি তড়িৎ বিভবকে তড়িৎক্ষেত্র দিয়ে ভাগ করি, তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে-


অর্থাৎ, তড়িৎ বিভব = তড়িৎক্ষেত্র x দূরত্ব


এখন, অসীমে তড়িৎক্ষেত্র শূন্য! অতএব অসীমে তড়িৎ বিভব-



যাই হোক, অসীমে বিভব শূন্য এটা আমরা জানলাম। এবার (xiii) আর (xiv) নং চিত্র দুইটা খেয়াল করো।


(xiii) নং চিত্রের তড়িৎ ক্ষেত্রটি একটি (+ve) চার্জ দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র। তার মধ্যে একটি পরখ চার্জ বা +1 C চার্জ স্থাপন করলে কী হবে?


+Q এবং +1, দুইটিই ধনাত্মক চার্জ, অর্থাৎ তারা পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে।


তার মানে (xiii) নং চিত্রে +1 C চার্জটির +Q চার্জ থেকে স্বাভাবিকভাবে দূরে সরে যাওয়ার কথা। এখন যেহেতু স্বাভাবিকটা ঘটা মানে বিভব কমা, তার মানে পরখ চার্জটি এক্ষেত্রে দূরে সরে গেলে তার বিভব কমে যাবে! তার মানে যদি কাছে আসে তাহলে বিভব বেড়ে যাবে! এখন চিন্তা করে দেখোতো? অসীমে বিভব শূন্য আর এক্ষেত্রে তুমি যতো উৎসের কাছে আসছো, বিভব বেড়ে যাচ্ছে! অর্থাৎ বিভবের মান হচ্ছে শূন্য থেকে বেশি কিছু একটা। এখন তুমি বলো শূন্য থেকে বড় সংখ্যাগুলো কি ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক? এজন্যই (+ve) চার্জ দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের বিভব ধনাত্মক বিভব! 😊


একই ভাবে (xiv) নং চিত্রের সাহায্যে তুমি ঋণাত্মক বিভবটা ব্যাখ্যা করতে পারো কি?


তড়িৎ ধারক

‘ধারক’ নামটা শুনলেই কী মনে হয়? কেউ কিছু একটা ধরে আছে- তাই না? আসলেই তাই! তড়িৎ ধারককে তুমি এভাবে চিন্তা করতে পারো- তড়িৎ ধারক হলো এমন এক ব্যবস্থা যার সাহায্যে তড়িৎকে, অর্থাৎ চার্জকে ধরে রাখা যায় বা সঞ্চিত করে রাখা যায়। কোন পরিবাহীর চার্জ ধারণ ক্ষমতাকে তার ধারকত্ব বলা হয়।


নিচের চিত্রটা একটু দেখোতো-



ধরো কোন একটা চার্জ নিরপেক্ষ ধাতব দন্ড CD। এটাকে তুমি যদি কোন (+ve) চার্জের উৎসের সঙ্গে সংযুক্ত ধাতব দন্ড AB এর সামনে রাখ, তাহলে কী হবে? আবেশ প্রক্রিয়ায় CD তে কিছু ধনাত্মক এবং কিছু ঋণাত্মক চার্জ পাওয়া যাবে। ব্যাপারটাকে ইচ্ছা করলে আমরা আরও ব্যাপক রূপ দিতে পারি। যেমন- (xvii) নং চিত্রে। আমরা AB আর CD এর পর এখানে আরও একটি দন্ড EF নিয়ে এসেছি এবং একইভাবে EF এও আবেশের কারণে কিছু ধনাত্মক এবং কিছু ঋণাত্মক চার্জ পাওয়া যাচ্ছে! এখন EF এর বাইরের পাশটা যদি আমরা একটা তার দিয়ে ভূ-সংযুক্ত করে দেই তাহলে ভূমি থেকে (-ve) চার্জ এসে বাইরের পাশে সৃষ্টি হওয়া (+ve) চার্জগুলোকে নিউট্রাল করে দেবে, অর্থাৎ EF দন্ডটি ঋণাত্মক চার্জযুক্ত হয়ে যাবে। এবার একটা ব্যাপার খেয়াল করতো? একটু আগে EF এর কী অবস্থা ছিলো? EF চার্জ নিরপেক্ষ ছিলো। এখন? EF ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। তাহলে আমরা কী করলাম? কিছু একটা করে EF কে চার্জিত করে ফেললাম! আরে! এটাই তো ধারক! কেন? আমরা একটু আগেই না বললাম যে কিছু একটা করে কোন পরিবাহীতে চার্জ সঞ্চয় করে রাখার System টাই হলো ধারক! আমরা তো তাই করলাম! তার মানে আমরা ধারক তৈরি করে ফেলেছি!


যাই হোক! স্থির তড়িৎ নিয়ে অনেক কথাই বললাম, অনেক কথা না বলাও থেকে গেলো। সব শেষে এসে আমি তোমাদের শুধু একটা কথাই বলতে চাই- চিন্তা করো, গবেষণা করো। স্বপ্ন দেখো! স্বপ্নের জগতটা সত্যিই অনেক সুন্দর। 😊


“মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় !”

1 Comment


এটা তোর অন্যতম সেরা লেখা!! ♥

Like

লেখালেখি

bottom of page